বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০১:৩৭ অপরাহ্ন

কর্মক্ষেত্রে কাজে অবহেলা বড় গুনাহ

কর্মক্ষেত্রে কাজে অবহেলা বড় গুনাহ

মুফতি মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন: মেধা-মনন, বুদ্ধি, দক্ষতা ও কায়িক শ্রমের বিনিময়ে জীবিকা নির্বাহ করা বৈধ। দায়িত্বশীল ও কর্মক্ষমদের কাজে উৎসাহিত করেছে ইসলাম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সর্বোত্তম কর্মী সেই ব্যক্তি, যে শক্তিমান ও দায়িত্বশীল।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ২৬)
কোনো প্রতিষ্ঠানে মাসিক বেতনের বিনিময়ে চাকরিতে যোগদানের মানে সে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুসারে মেধা ও শ্রম দিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা তোমাদের চুক্তিগুলো পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০১)

দায়িত্বশীলতা বড় আমানত
যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন পবিত্র আমানত হিসেবে গণ্য। আমানত রক্ষায় ইসলাম জোর তাগিদ দিয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতগুলো প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন মানুষের বিচার-মীমাংসা করবে, তখন ন্যায়ভিত্তিক মীমাংসা করো। আল্লাহ তোমাদের সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)
পূর্ণাঙ্গভাবে আমানত আদায় না করা বা খেয়ানত করা মারাত্মক গুনাহ। নবী (সা.) এটাকে মুনাফিক বা বিশ্বাসঘাতকের আলামত বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি। তা হলো মিথ্যা কথা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং আমানতের খেয়ানত করা।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যদিও সে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং নিজেকে মুসলমান মনে করে।’ আনাস (রা.) বলেন, ‘এমন খুব কম হয়েছে যে, নবী (সা.) ভাষণ দিয়েছেন অথচ তাতে এ কথা বলেননি, যার মধ্যে আমানতদারি নেই তার ইমান নেই। আর যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিয়মানুবর্তিতা নেই, তার ধর্ম নেই।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২৪০৬)
ইসলামে আমানতের পরিধি অনেক প্রসারিত। চাকরিজীবীদের কাজের সময়টুকুও আমানত হিসেবে গণ্য। সে সময় কাজ রেখে গল্প-গুজবে মেতে ওঠা বা কাজে ফাঁকি দেওয়া খেয়ানতের শামিল। অফিসের জিনিসপত্রও কর্মীর কাছে আমানত। ব্যক্তিগত কাজে তা ব্যবহার করা বা নষ্ট করা পুরোপুরি নিষেধ।
আমানতের মতো খেয়ানতের বিষয়টিও ব্যাপক। কারও গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন কথা কান পেতে শোনা খেয়ানতের অন্তর্ভুক্ত। এখন খেয়ানতের বিষয়টি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ এটি কবিরা গুনাহ। এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে
দায়িত্বশীলতা ও আমানত পূর্ণাঙ্গভাবে রক্ষা করা প্রত্যেকের জন্য ফরজ। এ ক্ষেত্রে অবহেলা করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি হতে হবে। কর্মীর কাছ থেকে কর্র্তৃপক্ষ বুঝে না পেলে পরকালে অপরাধী হিসেবে শাস্তি পেতে হবে। নবীজি (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যককে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৪৪; তিরমিজি, হাদিস: ১২৪)

অফিসের কাজে অবহেলা বড় গুনাহ
সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীলরা ঠিক সময়ে অফিসে আসেন। কর্তব্য পালনে ফাঁকি, অবহেলা বা অলসতার আশ্রয় নেন না। সরকার, প্রতিষ্ঠান, মালিক ও কর্তৃপক্ষের অবাধ্য হন না। তাদের আদেশ-নিষেধ আন্তরিকতার সঙ্গে মেনে নেন। ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, কাজে ফাঁকি দেওয়া, মিথ্যা বলা এসব দোষ-ত্রুটি থেকে দূরে থেকে দায়িত্ব পালনে মনোযোগ দেন।
সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রয়োগ করে কাজের মান নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। দায়িত্বে অবহেলার সুযোগ নেই। প্রতিটি ব্যক্তিকে তার কর্ম, পেশা ও দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন মালিকের কাছে তার আমানত প্রত্যর্পণ করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)

কাজে ফাঁকিবাজ পূর্ণ মুসলিম নয়
সব ক্ষেত্রে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। নামাজ-রোজার মতোই সেগুলো মেনে চলা ফরজ। যেমন ব্যবসায়ী কখনো ধোঁকা প্রতারণার আশ্রয় নেবেন না, ভেজাল দেবেন না। চাকরিজীবী সময়মতো অফিসে আসবেন, পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন এবং কাজে অলসতা করবেন না। কাজে যদি নিয়মবহির্ভূত সময়ক্ষেপণ করা হয়, সেটা প্রতারণা হিসেবে গণ্য হবে। ইসলাম এসবে কখনোই সমর্থন করে না। বরং নিয়মভঙ্গের জন্য শাস্তির কথা বলে। আল্লাহ বলেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়, যারা লোকের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় নেয় আর যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৩)
ফিকাহ বিশারদদের মতে, এখানে মাপে কম-বেশি করার অর্থ হলো পারিশ্রমিক পুরোপুরি আদায় করে নিয়ে কাজে গাফিলতি করা। কাজে ফাঁকি দিয়ে ওই সময় অন্য কাজ করা বা সময়টা অলস কাটিয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমরা যখন কাউকে দায়িত্ব প্রদান করি, সে যদি এক টুকরো সুতা বা তার চেয়েও কোনো ক্ষুদ্র জিনিস খেয়ানত করে, তবে কিয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় করে সে উত্থিত হবে।’
বিভিন্ন হাদিসের আলোকে জানা যায়, কাজে ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তি কখনো নিজেকে পূর্ণ মুসলমান দাবি করতে পারে না। কারণ ফাঁকির মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ হারাম। আর হারাম খাদ্য গ্রহণ করে কোনো ইবাদত পালন করলে আল্লাহ তা কবুল করেন না।

চাকরির ক্ষেত্রে সততা
সৎ-নিষ্ঠাবান ও নির্লোভ ব্যক্তি চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেবে। কারণ প্রতিষ্ঠানের উন্নতি-অবনতি, সফলতা-ব্যর্থতা নির্ভর করে সৎ কর্মচারীর ওপর। কর্মচারী সৎ না হলে প্রতিষ্ঠান সফলতা লাভ করতে পারে না। সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মী প্রতিষ্ঠানের জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক। কর্মীর সঙ্গে সদাচরণ করা কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বশীলদের নৈতিক দায়িত্ব। অন্যদিকে কর্মীদের কর্তব্য হলো প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর কোনো কাজ না করা।

আখিরাতে সফলতার জন্য কাজ করা
শ্রমের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হালাল হওয়া ও এর বিনিময়ে পরকালীন সফলতার প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি। সেবার মানসিকতা নিয়ে আন্তরিকতা ও আনন্দের সঙ্গে কাজ করলে পার্থিব-পারলৌকিক সাফল্য অর্জন সম্ভব।
পাশাপাশি কাজের জ্ঞান, যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন প্রতিটি কর্মীর একান্ত দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877